অনলাইন ডেস্ক: জমি রেজিস্ট্রেশনে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক। আইনি এ বাধ্যবাধকতার কারণে অনেকে জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় জাল টিআইএন ব্যবহার করছে। সাবরেজিস্ট্রার অফিস টিআইএনের সঠিকতা যাচাই না করায় অসাধু উপায় অবলম্বনকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এজন্য জমি রেজিস্ট্রেশনকালে এ ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধে টিআইএন যাচাই করতে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চিঠিতে টিআইএন যাচাই ছাড়া জমি রেজিস্ট্রেশন না করতে অনুরোধ জানানো হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মধ্যে জমি কেনাবেচার সময় দলিলমূল্য এক লাখ টাকার বেশি হলে এবং বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রেজিস্ট্রিকালে ই-টিআইএন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনগত এ বিষয়টি মেনে চলা হলেও প্রায় দেখা যায়, জমির ক্রেতা ও বিক্রেতা ভুয়া ই-টিআইএন দাখিল করেন। এর ফলে করদাতা চিহ্নিতকরণ এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। জমি রেজিস্ট্রেশনকালে দাখিলকৃত ই-টিআইএনের সঠিকতা যাচাই করা হলে জাতীয় রাজস্ব আদায়ে আরও অগ্রগতি হবে।
টিআইএনের সঠিকতা যাচাই করার জন্য চিঠিতে বলা হয়, কর বিভাগ থেকে ইস্যুকৃত প্রতিটি টিআইএন সনদে কম্পিউটার জেনারেটেড কিউআর কোড থাকে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করলে টিআইএনধারীর যাবতীয় তথ্য সহজে বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) প্রদ্যুৎ কুমার সরকার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, জাল টিআইএনের ব্যবহার রোধে এনবিআর ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করছে। বিশেষ করে যেসব সেবা নিতে জনগণকে টিআইএন নম্বর জমা দিতে হয়, সরকারের এমন প্রতিটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি এখনো ম্যানুয়ালি সম্পন্ন হয়। এ কারণে জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রার টিআইএন সনদের কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন। এ বিষয়ে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি, গাড়ির নিবন্ধন, ব্যাংকের এফডিআর, বিমা পলিসি কেনা, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণসহ ৩৮টি কাজে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এসব কাজে অনেকে নিয়মমাফিক টিআইএন না নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। জাল টিআইএন ব্যবহার করে নানা সেবাও নিয়ে থাকেন। জমি রেজিস্ট্রেশনে হরহামেশা জাল টিআইএন ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।
আয়কর অধ্যাদেশে জাল টিআইএন ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীর ওপর আর্থিক জরিমানাসহ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১২৪এ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অন্যের টিআইএন অথবা জাল টিআইএন ব্যবহার করেন বা আয়কর আইন অনুযায়ী যেসব ক্ষেত্রে টিআইএন ব্যবহার বাধ্যতামূলক, সেসব ক্ষেত্রে জাল টিআইএন ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেবা দেওয়ার সময় টিআইএন ভেরিফিকেশন না করলেও ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪এএ ধারা অনুযায়ী সেবা প্রদানকালে টিআইএন সনদ যাচাই না করলে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে আয়কর বিভাগ। ১৬৫এ ধারা অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি জাল টিআইএন ব্যবহার করেন বা অন্যের টিআইএন ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাল টিআইএন ব্যবহার করে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বন্ধ করতে গত মার্চে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে করপোরেশনের তথ্যভান্ডারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করে এনবিআর। এছাড়া গত ২০ সেপ্টেম্বর জাল টিআইএনে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বন্ধে বিআরটিএর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করেছে এনবিআর। এ চুক্তির ফলে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়ার আগে বিআরটিএ এনবিআরের ই-টিআইএন সার্ভার থেকে টিআইএনের সঠিকতা যাচাই করতে পারবে। পক্ষান্তরে এনবিআর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর বা এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নম্বর দিয়ে বিআরটিএর সিস্টেমে সার্চ দিলে বিস্তারিত তথ্য পাবে।
এদিকে সূত্র জানায়, শুধু টিআইএন নম্বর জমা দিয়ে পার আর পাওয়া যাবে না। রিটার্ন জমার প্রাপ্তিস্বীকার পত্র দাখিল করা বাধ্যতামূলক হবে। এজন্য সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে তাদের এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান সংশোধন করতে শিগগির তাগিদ দেবে এনবিআর।
এনবিআরের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের টিআইএনধারী রয়েছে ৬১ লাখের বেশি। অথচ ২০২১-২২ করবর্ষে রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৪ লাখ করদাতা। অর্থাৎ টিআইএনধারীর ৬১ শতাংশ রিটার্ন জমা দেয়নি। অথচ মোটা দাগে করযোগ্য আয় রয়েছে-এমন সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। যুগান্তর
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।